Monday, September 1, 2025

পেটের টানে উজার হচ্ছে আগামীর অর্থনীতি


গ্রামীণ পাহাড়ি এলাকার উপজাতিদের কাজ ও খাদ্যের অভাব আজ তাদেরকে এক অদ্ভুত বাস্তবতার মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। সংসার চালানোর টানে প্রতিদিনই তারা বনে-জঙ্গলে ছুটে যাচ্ছেন বাঁশকুড়ুল কুড়োতে। বিকল্প জীবিকার সুযোগ না থাকায় বাধ্য হয়েই এই কচি অঙ্কুর বিক্রি করছেন হাটে-ঘাটে, বাজারে কিংবা জাতীয় সড়কের ধারে।


অথচ তারা ভালো করেই জানেন, আজকের নগদ আয়ের টানে তারা আগামী দিনের বাঁশ সম্পদ ধ্বংস করে দিচ্ছেন। গ্রামীণ বাজার থেকে শহর পর্যন্ত সর্বত্রই এখন খোলামেলা ভাবে বিক্রি হচ্ছে বাঁশকুড়ুল। জাতীয় সড়কের ধারে কিংবা হাটবাজারে উপজাতি রমণীদের ঝুড়িভর্তি বাঁশকুড়ুল বিক্রি করতে দেখা এখন আর অস্বাভাবিক কিছু নয়। পাহাড়ি অঞ্চল ছাড়াও বন্দরনগরী চট্টগ্রামে বাঁশকুড়ুল বা বাঁশের কচি অঙ্কুর হয়ে উঠেছে এক জনপ্রিয় খাদ্য উপাদান। উপজাতি পরিবারগুলির কাছে এটি একদিকে ঐতিহ্যবাহী রান্নার উপকরণ, অন্যদিকে তাৎক্ষণিক আয়ের উৎস। বাজারে প্রতি কেজি বাঁশকুড়ুল বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। এক কেজিতে প্রায় ২০-২৫টি বাঁশকুড়ুল পাওয়া যায়। অথচ জানাই আছে, এক বছর পর এই কচি অঙ্কুরগুলি পূর্ণতা পেলে বাঁশের বাজারমূল্য দাঁড়ায় গড়ে ৯০ -১০০ টাকা প্রতি পিসে। অর্থাৎ আজ যে বাঁশকুড়ুল ৬০/৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, তা পরের বছর ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকার সমান হতে পারতো!  বাঁশকুড়ুল সংগ্রাহকদের বক্তব্য, বিকল্প জীবিকার সুযোগ নেই বলেই তারা বাধ্য হয়ে প্রতিদিন বন থেকে বাঁশকুড়ুল কুড়িয়ে আনেন।


সংসার চালানোর জন্য নগদ অর্থের প্রয়োজন, তাই সবকিছু জেনেও তারা নিজেদের ভবিষ্যৎ আয়ের পথ কেটে দিচ্ছেন। পাহাড়ি এলাকায় কাজ এবং খাদ্যাভাব প্রকট হওয়ায় এই ব্যবসাই হয়ে উঠেছে উপজাতি অনেক পরিবারের একমাত্র ভরসা।


বিশেষজ্ঞদের মতে, নির্বিচারে বাঁশকুড়ুল বিক্রির ফলে পার্বত্য অঞ্চল গুলোতে বাঁশ উৎপাদন ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এতে দীর্ঘমেয়াদে শুধু পরিবেশ নয়, দেশের অর্থনীতিও ধাক্কা খাচ্ছে। অথচ সরকারী জনপ্রতিনিধি ও দায়িত্বরত দের সামনেই এভাবে বাঁশকুড়ুল বিক্রি হচ্ছে, কিন্তু কোনও পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না।


বাঁশ উৎপাদন বাড়িয়ে পাহাড়ি মানুষদের অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর করা মতো উদ্যোগ নেওয়ার কেউ নেই। 


কৃষি ও বনজ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যদি বাঁশকুড়ুল সংগ্রহ নিয়ন্ত্রণ করে বাঁশবাগান গুলিকে সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা যায়, তবে পাহাড়ি অঞ্চলের অর্থনীতি বহুগুণ শক্তিশালী হতে পারে। বাঁশ থেকে কাগজ, আসবাব, হস্তশিল্প, নির্মাণসামগ্রীসহ নানা শিল্প গড়ে তোলা সম্ভব। এর জন্য প্রয়োজন দূরদর্শী পরিকল্পনা ও সরকারী উদ্যোগ।


আজকের টুকরো আয়ের টানে পাহাড়ি মানুষজন নিজেরাই ধ্বংস করছেন আগামীদিনের বড় সম্পদ। অথচ সরকার চাইলে বাঁশকুডুলের নিয়ন্ত্রিত সংগ্রহ, বিকল্প কর্মসংস্থান এবং বাঁশভিত্তিক শিল্প গড়ে তুলে পুরো অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করতে পারতো। প্রশ্ন হচ্ছে, কে নেবে এই উদ্যোগ?


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: