Monday, March 22, 2021

বিসিএস পরীক্ষা দিতে যাওয়া হিন্দু নারীর জোর করে হাতের শাঁখা খুলে নিল পাষণ্ড শিক্ষক




শাঁখা ও সিঁদুর হলো একজন বিবাহিত হিন্দু নারীর প্রতীক। হিন্দু বিশ্বাস মতে স্বামীর মঙ্গলের জন্য বিবাহিত নারীরা স্বামী বেঁচে থাকা পর্যন্ত এগুলো পরমযত্নে আগলে রাখেন। তবে শুক্রবার (১৯ মার্চ) অনুষ্ঠিত বিসিএস পরীক্ষায় চট্টগ্রামের একটি কেন্দ্রে এক নারী পরীক্ষার্থীকে শাঁখা খুলে রাখতে বাধ্য করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।


চট্টগ্রাম সরকারী পলিটেকনিক কলেজ কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর কলেজ কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। অনুসন্ধান শেষে তদন্ত কমিটি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশও করে।


মৌপিয়া রায় নামে ওই পরীক্ষার্থী জানান, ‘শুক্রবার (১৯ মার্চ) বিসিএস পরীক্ষা দিতে চট্টগ্রাম সরকারি পলিটেকনিক কলেজে যাই। হলে প্রবেশের আগে নিয়মানুসারে সকলকে তল্লাশি করা হচ্ছিলো এবং গহনা খুলে রাখার নির্দেশ দিচ্ছিলো কলেজের শারীরিক শিক্ষা বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মদ ইলিয়াস। আমাকেও তল্লাশির পর শাঁখা খুলে রাখার জন্য বলা হয়। কিন্তু আমি বলি শাঁখা তো অলংকার না, এটা হিন্দু মেয়েদের অহংকার। হিন্দু বিবাহিত মেয়েরা স্বামী বেঁচে থাকা পর্যন্ত এটি খুলতে পারে না। কিন্তু কোন কথা শুনতেই চাচ্ছিলেন না সেই শিক্ষক।’




মৌপিয়া আরও বলেন, ‘এক পর্যায়ে আমাকে শাঁখা না খুললে কেন্দ্রে প্রবেশ করার অনুমতি দেওয়া হবে না বলেও জানান তিনি। সেসময় আমি বারবার অনুরোধ করলেও আমাকে “বেশি কথা না বলবেন না” বলে ধমক দেন। আমি অনেকটা নিরুপায় হয়ে কান্না করতে করতে শাঁখা খুলতে বাধ্য হই। এবং এজন্য আমি আমার পরীক্ষা ঠিকমত দিতেও পারিনি।’




সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করলেও বিয়ের পর চট্টগ্রামেই স্থায়ীভাবে থাকেন মৌপিয়া। লেখাপড়ায় ভালো বলে শশুরবাড়ির লোকজনের অনুপ্রেরণায় বিসিএস পরীক্ষা দিতে গিয়ে এমন ব্রিবতকর পরিস্থিতে পড়েন তিনি। এ সম্পর্কে জানতে চাইলে সরকারি পলিটেকনিক কলেজের অধ্যক্ষ স্বপন নাথ বলেন, ‘এরকম একটা ঘটনায় কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। তবে বিষয়টি আমরা জেনেছি। আমরা শিক্ষার্থীর পরিবারের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করেছি এবং চার সদস্যর একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করেছিলাম।’




অধ্যক্ষ স্বপন নাথ আরও বলেন, ‘রোববার (২১ মার্চ) সেই তদন্ত কমিটি তদন্ত রির্পোট দেয়। তাতে শিক্ষক ইলিয়াস, এমএলএসএস সবিতা রানী ও সাজেদা বেগম এর বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতার প্রমাণ পাওয়া যায়। তদন্ত রির্পোটে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা গ্রহণেরও সুপারিশ করা হয়।’


বিসিএস এর পরীক্ষায় শাঁখা না পড়ে যাওয়ার কোন নির্দেশনা ছিলো কিনা জানতে চাইলে সরকারি পলিটেকনিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও তদন্ত কমিটির সদস্য শিক্ষক তাপস দেব বলেন, ‘আমাদের কাছে অলংকার পড়ে পরীক্ষার হলে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা ছিলো, কিন্তু শাঁখার বিষয়ে কোন নিষেধাজ্ঞা ছিলো না। অভিযুক্ত শিক্ষক হয়ত শাঁখাকে অলংকার মনে করে ভুল করে থাকতে পারেন।’


তদন্ত কমিটির সুপারিশক্রমে অভিযুক্ত শিক্ষক ও দুজন এমএলএসএসকে বার্ষিক নিরাপত্তা কমিটির পদ থেকে বহিষ্কার করা হলেও বড় কোন শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়নি অভিযুক্ত শিক্ষককে।



এ ব্যাপারে শিক্ষার্থী মৌপিয়ার ভাসুর চট্টগ্রাম সরকারী মহসিন কলেজের গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুবীর দাশ বলেন, ‘আমি নিজেও একজন বিসিএস ক্যাডার, আমরাও বিসিএস এর পরীক্ষাগুলোর হলে দায়িত্বে থাকি। কিন্তু আমরা কখনোই কোন পরীক্ষার্থীর সাথে খারাপ আচরণ করি না, আর মৌপিয়ার সাথে ঘটা ঘটনারতো প্রশ্নই আসে না। বিসিএসের কোন নিয়মে শাঁখা খুলে যাওয়ার কোন নিয়ম নেই ‘ এ বিষয়টি সম্পূর্ণ ধর্মীয় রীতি নীতি বহির্ভূত বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক মোহাম্মদ ইলিয়াসের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।





শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

1 comment:

  1. Hindu narir Shakha khule neoyar sahos kothay pelo. Ader Charom shikha deowa uchit. Se kivabe teacher hote pare ta amar vabte greena lage.

    ReplyDelete