Monday, October 21, 2019

লামায় ৪ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে : উপকরণ না থাকায় ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা ব্যবস্হা




স্বপন কর্মকার,লামা, (বান্দরবান) প্রতিনিধিঃ বান্দরবানের লামা উপজেলায় সড়ক বিদ্যুৎ স্যানিটেশন সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ড হলেও সেখানে স্হানীয় ভাবে গড়েউঠা ৪ টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চলছে দুখে দুখে, বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক কর্মচারী বেতন ভাতা বিহীন দায়িত্ব পালন করায় পরিবার পরিজন নিয়ে দূর্বিসহ জীবন কাটাচ্ছে। উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, পাহাড়ি দুর্গম এলাকায় বিদ্যালয়হীন পাড়া ও গ্রামের ছেলে মেয়েদের শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করার জন্য স্থানীয় সচেতন মহল নিজেদের অর্থায়নে চারটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। বিদ্যালয়গুলো হল, সরই ইউনিয়নের ধূইল্যাপাড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৯৯৮, লামা পৌরসভার নুনারঝিরি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ২০০১, লামা সদরে মিরিঞ্জা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ২০০০ ও ফাঁসিয়াখালীর কমিউনিটি সেন্টার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। দূর্গম পাহাড়ি এলাকার এ ৪টি বিদ্যালয়ের ছয় শতাধিক ছাত্র/ছাত্রী লেখাপড়া করছে এবং স্কুল গুলোতে কর্মরত রয়েছে ১৬ জন শিক্ষক। মিরিঞ্জা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী মেন্নাই ম্রো জানান, আমাদের স্কুলের কোন ছাত্র/ছাত্রী উপবৃত্তি পাই না। তাই আমাদের লেখাপড়া চালিয়ে যেতে কষ্ট হচ্ছে। একইভাবে এই চারটি বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ৬শত ছাত্র ছাত্রী সরকার প্রদত্ত উপবৃত্তি পায় না বলে জানা গেছে। ধূইল্যাপাড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জনাব জসিম উদ্দিন বলেন , আমি উক্ত বিদ্যালয়ে ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে স্কুলে জয়েন্ট করি দীর্ঘ ৯ বছরের অধিক এক নাগাড়ে বিনা বেতনে বিদ্যালয়ে কর্মরত আছি। বর্তমানে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি প্রধান শিক্ষক আরোও বলেন আমাদের বিদ্যালয়টি ১৯৯৮ সালে তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোহাম্মদ আলীর প্রচেষ্টায় স্হানীয় কৃষক সমসু মিয়া'র দানকৃত ৪০ শতক জমির উপর বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়। বর্তমানে ৪ শিক্ষক সম্পূর্ণ বিনা বেতনে প্রায় দেড়শতাধিক শিক্ষার্থীর মাঝে নিয়মিত পাঠদান দিয়ে যাচ্ছি। স্কুলে ভবনের সমস্যা ছাত্র ছাত্রীদের গাদাগাদি করে ক্লাসে বসতে হয়। ছাত্র-ছাত্রী অনুপাতে শ্রেণী কক্ষ এবং আসবাবপত্রের একান্ত প্রয়োজন। আগামীতে সরকারী সহযোগিতা যেমনঃ উপবৃত্তি,মিড ডে মিল, ভবন আসবাবপত্র ও শিক্ষা উপকরণ এবং সরকারের সুদৃষ্টি পেলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। কিন্ত আর্থিক দুঃখ-দৈন্যতার বিদ্যালয়ে অগ্রযাত্রা ব্যহত। বহু প্রচেষ্টার পরও বিদ্যালয়টি এখনো সরকারের কৃপাদৃষ্টি লাভে বঞ্চিত। এহেন গুরুত্বপূর্ণ অবেহেলিত পাহাড়ী জনপদে শিক্ষা বিস্তারে বিদ্যালয়টির ভূমিকা অতুলনীয়। অথচ এতো গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার পরও বিদ্যালয়টি আজও পর্যন্ত জাতীয়করনের আওতায় আসেনি। একারনে বিদ্যালয়ের আর্থিক দুরাবস্থায় স্বাভাবিক কার্যক্রম প্রতিবন্ধকতায় সম্মুখীন। বর্তমানে বিদ্যালয়টি আশু সংস্কার একান্ত প্রযোজন। ধুইল্ল্যাপাড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বলেন অত্র বিদ্যালয়টি জাতীয়করণে জন্য পার্বত্য বিষায়ক মন্ত্রনালয়ের মাননীয় মন্ত্রী ও শিক্ষাবান্ধব সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের উর্ধতন কতৃপক্ষের প্রয়োজনীয় হস্তক্ষেপ দাবি করছেন। উল্লেখ্য, উক্ত এলাকাটি পার্বত্য অঞ্চলের অবহেলিত এলাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ জনপদ। তাই এলাকার দরিদ্র পরিবারের শিক্ষা ও জ্ঞান বিতরনের বিদ্যালয়টির ভূমিকা অপরিহার্য নুনারঝিরি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সৈয়দা শাহানাজ পারভীন জানান, দীর্ঘদিন বিনা বেতনে শিক্ষকতা করায় পরিবার-পরিজন নিয়ে এই ৪টি স্কুলে মোট ১৬ জন শিক্ষকের পরিবার চরম অভাব-অনটনে পড়ে দুঃখ দুর্দশায় পতিত হয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে শিক্ষকগণ শিক্ষকতা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যার ফলে বিদ্যালয় গুলোতে পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ধুইল্যাপাড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদে'র সদস্য মো. ইদ্রিছ কোম্পানি জানান, সরকারের জাতীয়করণের সব শর্ত পূরণ করা সত্ত্বেও এবং জাতীয়করণের তালিকায় নাম থাকার পরেও এই বিদ্যালয় সহ উপজেলার আরো ৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ হয়নি। লামা উপজেলা শিক্ষা অফিসার তপন কুমার চৌধুরী জানান, জাতীয়করণের তালিকা থেকে বাদ পড়া লামা উপজেলার এই চারটি প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে পিএসসি পরীক্ষায় নিয়মিত অংশগ্রহণ করছে। ছাত্র ছাত্রীরা নিয়মিত লেখাপড়া করছে। বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য ফাতেমা পারুল জানান, বিদ্যালয় গুলো টিকিয়ে রাখার স্বার্থে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুর-এ জান্নাত রুমি জানান, পিছিয়ে পড়া পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ছেলেমেয়েদের শিক্ষা নিশ্চিতকরণের জন্য এই চারটি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে আর্থিক সহায়তা দিয়ে টিকিয়ে রাখা প্রয়োজন। উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল জানান, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের আর্থিক সহায়তার মাধ্যমেই লামা উপজেলার বেসরকারি চারটি বিদ্যালয় টিকিয়ে রাখা যেতে পারে। বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: