কাশ্মীর দখলের পর এবার মোদীর টার্গেট পাক অধিকৃত কাশ্মীর
দল প্রতিষ্ঠা থেকে নির্বাচনী ইশতেহার সব জায়গাতেই বিজেপির লক্ষ্য ছিল ক্ষমতায় এলে জম্মু কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার। তবে মোদি সরকারের প্রথম ইনিংসে রাজ্যসভায় নিজেদের সাংসদের হার কম থাকায় অনেক বড় বড় বিল আটকে যায়। আর দ্বিতীয় ইনিংসে লোকসভা এবং রাজ্যসভায় বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোড়ে একের পর এক বিল পাশ। মোটর ভেহিক্যালস বিল, তিন তালাক বিল পাশ, জম্মু কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা বিলোপ।
জম্মু কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা বিলোপের পর রাজ্যসভায় স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে কেন্দ্র সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপ কি হতে চলেছে? আর এই প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ থেকে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ বুঝিয়ে দেন, সরকারের পরবর্তী লক্ষ্য পাক অধিকৃত কাশ্মীর। মিশন কাশ্মীর শেষ। রাম মন্দিরের বিতর্কও ফয়সালা হবার মুখে। তাই এই পরের ধাপে পাক অধিকৃত কাশ্মীর কে ভারতের সঙ্গে সংযুক্ত করার দাবি নিয়ে সরব হল অখিল ভারতীয় সন্ত সমিতি।
দিল্লিতে হওয়া এ সংগঠনের বৈঠক এ আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল পাক অধিকৃত কাশ্মীর দখল। তাদের যুক্তি পাকিস্তানের অর্থনৈতিক অবস্থা বর্তমানে শোচনীয়। পাঞ্জাব সিন্ধু বেলুচিস্তান ও খাইবার পাখতুনখোয়া এই চারভাগে পাকিস্তান ভেঙ্গে যাবার সম্ভাবনা প্রবল। তাই অখিল ভারতীয় সন্ত্রাস সমিতির মতে দেশের এই দুর্বল সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রয়োজনে সেনা নামিয়ে নিজেদের হারানো জমি উদ্ধার করুক ভারত।
কাশ্মীর নিয়েছে এই রকম একটি পদক্ষেপ নিতে পারেন এই আশঙ্কা ইতিমধ্যেই করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। পাকিস্তানের সংসদে কয়েকদিন আগে তিনি বলেছিলেন সংঘের দেখানো পথে হাঁটছে নরেন্দ্র মোদি সরকার। তাই পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ভারতের অভিযানের আশঙ্কা প্রবল। সেই মুহূর্তে পাকিস্তানের কাছে রাস্তা খোলা থাকবে দুটি। এক, পাক অধিকৃত কাশ্মীর থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়া। দুই ভারতের সঙ্গে শেষ পর্যন্ত লড়াই করা। তবে পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এই দুই নম্বর রাস্তাটি বেছে নেবেন বলে সংসদে দেশবাসীকে আশ্বস্ত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন ভারতের যে কোন আগ্রাসনের বিরুদ্ধে পাক সেনা তাদের শেষ শক্তি দিয়ে লড়াই করবে।
ইতিমধ্যেই দু-দুবার সার্জিক্যাল স্ট্রাইক ব্যবহার করেছেন নরেন্দ্র মোদি। তাই আসন্ন বিধানসভা ভোটের আগে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের অভিযান বিজেপির ক্ষেত্রে তুরুপের তাস হতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। কারণ সংসদে দাঁড়িয়ে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী অমিত শাহ এ কথা স্পষ্ট করে দেন, “তাঁর নজর পাক অধিকৃত কাশ্মীর। যার জন্য তিনি প্রাণও বিসর্জন দিতে প্রস্তুত।”
জম্মু কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা বিলোপের পর প্রথম পাক অধিকৃত কাশ্মীর নিয়ে প্রশ্ন তোলেন কংগ্রেস দলনেতা অধীর চৌধুরী। আর এই প্রশ্ন শুনে অমিত শাহ বলেন, “আমি যখন জম্মু-কাশ্মীরের কথা বলি, তখন তার মধ্যে পাক অধিকৃত কাশ্মীরও থাকে।” এরপর তিনি বিরোধীদের হৈ হট্টগোলের মধ্যেই আরও গলা চড়িয়ে বলেন, “পাক অধিকৃত কাশ্মীর ভারতেরই অংশ। পাক অধিকৃত কাশ্মীরের জন্য আমি প্রাণ বিসর্জন দিতে প্রস্তুত।”
পাক অধিকৃত কাশ্মীরের দিকে যে মোদি সরকার হাত বাড়াতে পারে তার আশঙ্কা করেছিলেন প্রথম মোদি সরকারের জমানায় ভারতে নিযুক্ত প্রাক্তণ পাক হাই কমিশনার আব্দুল বসিত। ভারতে থাকাকালীন সংঘ পরিবারের সাধারণ সম্পাদক রাম মাধবের সাথে তাঁর একটি বৈঠক হয়েছিল। সেই বৈঠকের প্রসঙ্গ তুলে পাকিস্তানের একটি সংবাদপত্রে বর্তমানে মুখ খুলেছেন আব্দুল বসিত। তিনি বলেছেন, “সেই সময় রাম মাধব আমায় বলেছিলেন, ৩৭০ ধারা কেন্দ্র সরকার যে কোন সময় বাতিল করবে। আমাদের লক্ষ্য হলো পাক অধিকৃত কাশ্মীরকে ভারতের সঙ্গে জোড়া।”
পাক অধিকৃত কাশ্মীর প্রসঙ্গকে আরও একটু উস্কে দিয়ে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ বলেন, “আর একটি সমস্যায় বাকি রয়েছে। যা হলো, পাক অধিকৃত কাশ্মীর। কি করে তা ফেরত আনা যায় তা এখন ভাবতে হবে। আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ করবো, বিষয়টি দেখার জন্য।”
দেশের নিরাপত্তার জন্য পাক অধিকৃত কাশ্মীর দখল করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে জানা যায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সূত্রে। কারণ জঙ্গিদের অধিকাংশ জঙ্গি শিবির এবং লঞ্চপ্যাড গুলি রয়েছে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে। পাক অধিকৃত কাশ্মীর সমস্যার জন্য রাজনৈতিকভাবে কেন্দ্র সরকার জহরলাল নেহেরুকেই দায়ী করেছেন। দায়ী করার পর জবাবী উত্তরে অমিত শাহ বলেন, “ভারতীয় ফৌজের পাল্টা হামলায় যখন পাকিস্তানি সেনারা পিছু হটছে, ঠিক সে সময় কারো সাথে কোন রকম আলোচনা না করে একতরফা রেডিওর মাধ্যমে নেহেরু যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছিলেন। সমস্যাটি পৌঁছায় রাষ্ট্রপুঞ্জের আঙিনায়। সে সময় ভারতীয় সেনাকে না আটকালে আজ পাক অধিকৃত কাশ্মীর ভারতের অংশ হতো, কোন সমস্যা থাকতো না।”
0 coment rios: