Tuesday, August 13, 2019

ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে নতুন ওষুধ আবিস্কার করে বিশ্বকে তাক লাগালেন বাংলাদেশি অধ্যাপক


এবার সংক্রামক ভাইরাস প্রতিরোধী ওষুধ আবিস্কারের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছেন বাংলাদেশি বিজ্ঞানী অধ্যাপক হেমায়েত উল্লাহ ও তার দল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক, হেমায়ত উল্লাহ, বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। তার এই যুগান্তকারী আবিস্কার সারা পৃথিবীতে হই চই ফেলে দিয়েছে। 

কারন বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরেই ভাইরাস প্রতিরোধী নতুন ওষুধ আবিস্কারের চেষ্টা চালিয়ে গেলেও খুব একটা সফলতা আসেনি। এর উপর সারা দুনিয়ায় এন্টিবায়োটিকের অপব্যবহারে অকার্যকর হয়ে পড়ছে পুরনো ওষুধগুলো। বিশেষ করে বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশ, যেখানে মানুষের ওষুধ ব্যবহারে তেমন কোন নিয়ন্ত্রণ না থাকায় এই সমস্যা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। অকারণ এন্টিবায়োটিক ব্যবহারে রোগজীবানুগুলো ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে ’সুপারবাগ’ এ রুপ নিচ্ছে যার সংক্রমণ নিশ্চিত মৃত্যুর দিকেই ঠেলে নিচ্ছে আক্রান্তদের।
হাওয়ার্ড ইউনিভার্সিটির জীববিজ্ঞান বিভাগের গবেষক হেমায়েত উল্লাহ ও তার দলের একটি গবেষণা প্রতিবেদন সম্প্রতি জৈব চিকিৎসা জার্নাল অনকোটাইলেস এ প্রকাশিত হয়েছে। যাতে হেমায়েত উল্লাহ দেখিয়েছেন সুনির্দিষ্ট প্রোটিন RACK1  নিয়ন্ত্রণ করা গেলে মানবশরীরে জীবানুর সংক্রমন ঠেকানো যাবে। এর ফলে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, হেপাটািইটিস সি, পোলিও, ড্রোসফিলা সি, ক্রিকেট প্যারালাইসিস সহ বহু মারাত্মক রোগের সংক্রমন প্রতিহত করবে।
আবিস্কারের প্রমাণ হিসাবে, জার্নালে হার্পস সিম্পলক্স ভাইরাস -1 এর বিরুদ্ধে ওষুধগুলির কার্যকারিতা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়। যা সাধারণ জীবাণু যা মানুষের প্রজননতন্ত্র অথবা মুখের উপর বেদনাদায়ক ফুসকুড়ি সৃষ্টি করে। অধ্যাপক হেমায়েত উল্লাহর আবিস্কার সফলভাবেই এই জীবানুর বংশবিস্তার ও সংক্রমণ প্রতিহত করেছে।
অধ্যাপক হেমায়েত উল্লাহ উদ্ভিদ প্রোটিনের উপর গবেষণা করার সময় প্রতিকার উদ্ভাবন করেছিলেন যা ডেঙ্গু সহ ভাইরাল রোগের চিকিৎসার জন্য ওষুধ তৈরির জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
সম্প্রতি মার্কিন টিভি চ্যানেল ফক্স ফাইভের সাক্ষাত্কারে হেমায়েত উল্লাহ এই আবিস্কারের বিস্তারিত বর্ননা দেন। তিনি সেখানে বলেন, "আমরা একটি উদ্ভিদ প্রোটিন নিয়ে কাজ করছিলাম। মানব দেহে অনেক ভাইরাস প্রজনন এর জন্য একই প্রোটিন ফিড পাওয়া যায়। আমরা ভেবেছিলাম, যদি আমরা প্রোটিনের অপারেশন প্রতিরোধ করতে পারি, তাহলে ভাইরাসটি ছড়িয়ে যাবে না। গবেষণার প্রথম পর্যায়ে আমরা সফল হয়েছি।
বিদ্যমান ওষুধের মৌলিক ত্রুটি হ'ল তারা আক্রান্ত শরীরের জন্য দীর্ঘ লড়াই করতে পারে না। যেমন মানুষ নিরাময় বা প্রতিরোধের জন্য একটি ভাইরাস সনাক্ত করে, তেমনি ভাইরাসও ওষুধটি কী ভাবে কাজ করে তাও পর্যবেক্ষণ করে। ভাইরাস তারপর অবস্থা বুঝে ওষুধটির সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেয়। অতএব আমরা শুরুতে ওষুধের ভাল কাজ দেখলেও নির্দিষ্ট সময়ের পর সেই ওষুধের আর কার্যকারিতা থাকছেনা। এক্ষেত্রে হেমায়ত উল্লাহের আবিষ্কার অনন্য। তার আবিস্কার ভাইরাসের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ না করলেও তাকে প্রতিহত করবে যাতে সেটি সংক্রমন না ছড়াতে পারে। 

গবেষণাটি হেমায়েত উল্লাহের নেতৃত্বে একটি দল দ্বারা পরিচালিত হয় এবং হাওয়ার্ড ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিন-কিয়ী তং এবং সের্গেই নেখাইয়ের আরও দু’জন গবেষক এতে কাজ করেন।
তারা অ্যাক্টিভেটেড সি Kinase 1 এর জন্য রিসেপটর নামক প্রোটিন খুঁজে পেয়েছেন যা মানব দেহে অনেকগুলি ভাইরাস বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন যে হেমায়ত উল্লাহ এবং তার দলের আবিস্কার চিকিৎসা বিজ্ঞানের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হাওয়ার্ড ইউনিভার্সিটির প্রোস্ট এবং প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা অ্যান্থনি ওয়াটোহ বলেন, "হেমায়েত উল্লাহ ও তার দলটি প্রদাহজনক ওষুধ সৃষ্টিতে একটি বড় সুখবর এনেছেন। আমরা আশা করি এটি অনেক রোগের চিকিৎসায় সহায়ক হবে। 

অনেক ভাইরাস নিরাময় করতে সক্ষম হওয়ার পদ্ধতি আশা করে হেমায়ত উল্লাহ বলেন, "গবেষণায় এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। তার কার্যকারিতা কোন পশু শরীরের প্রয়োগ করার পরে ভাল বোঝা যেতে পারে। আমরা আশাবাদী যে পরবর্তী 2-3 বছরে সফলভাবে প্রদাহজনক ওষুধ প্রয়োগ করা সম্ভব হবে। "ওষুধ আবিস্কারের বিষয়ে অধ্যাপক হেমায়ের উল্লাহ বলেন "যদিও ফলাফলগুলি প্রাথমিক তবে তারা পরীক্ষাগারে উচ্চ কার্যকারিতা প্রদর্শন করে। এই পদ্ধতির নতুনত্বটি নিশ্চিত করে যে ওষুধ শুধুমাত্র একটি ভাইরাসের জন্য নির্দিষ্ট নয় তবে এটি একই হোস্ট ফ্যাক্টর ব্যবহার করে এমন বিভিন্ন রোগের ভাইরাসগুলির বিরুদ্ধে কার্যকর হবে। হিউম্যান প্যাথোজেনিক ভাইরাসগুলি ইতিমধ্যে একই হোস্ট ফ্যাক্টর ব্যবহার করতে পরিচিত। আমরা এখন কি প্রয়োজন পশু মডেল এবং প্রাক ক্লিনিকাল ট্রায়াল পরীক্ষা। আশা করা যায় যে তহবিল পাওয়া গেলে, আমরা ২ থেকে ৩ বছরের মধ্যে চুড়ান্ত আবিস্কারটি নিয়ে মানবজাতির সামনে হাজির হতে পাররো। 

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: