Wednesday, October 30, 2019

গত ২৯ বছরেও এমপিও ভুক্ত হলোনা সরই নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়




স্বপন কর্মকার লামা,(বান্দরবান) প্রতিনিধিঃ
বান্দরবানের লামা উপজেলার দুর্গম পাহাড়ি সরই ইউনিয়নে বসবাস নাগরিক সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর। এদের বেশির ভাগেরই অবস্থান দারিদ্র সীমার নিচে। আর সেসব মানুষের সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে এলাকার মানুষ গড়ে তুলেন সরই নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় নামের একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এলাকায় শিক্ষার আলো ছড়িয়ে আসছে একমাত্র বিদ্যালয়টি।



গত ২৯ বছরেও এমপিও ভুক্তি না হওয়ায় বিনা বেতনেই শির্ক্ষার্থীদের পাঠদান করে আসছেন এ বিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মচারীরা। সর্বশেষ এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের তালিকায় নিজেদের বিদ্যালয়ের নাম দেখবেন এমনটাই আশা ছিল এ বিদ্যালয়ে শিক্ষক-কর্মচারী গণের। কিন্তু তালিকায় নাম না থাকায় এখন হতাশ হয়ে পাঠদানে আগ্রহ হারাতে বসেছে শিক্ষকরা। সবার একটায় দাবি অচিরেই যেন এই বিদ্যালয়টিকে এমপিওভুক্ত করা হয়। এমপিও ভুক্তি হলে ঝড়ে পরা শিক্ষার্থীর হার কমে, বাড়বে শিক্ষার হার।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলা সদর থেকে ২৩ কিলোমিটার দূরে জনবহুল সরই ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী কেয়াজুপাড়া এলাকায় অবস্থিত বিদ্যালয়টি। এটি ছাড়া আশপাশ এলাকায় আর কোন মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই। কোমলমতি শিশুদের কথা বিবেচনা করেই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী ও স্থানীয় আবদুল আজিজ লিড়ার ১৯৯১ সালের ১ জানুয়ারী প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করেন।



শিক্ষানুরাগী আবদুল আজিজ লিড়ার বিদ্যালয়ের জন্য দেড় একর জমিও দান করেন। পরবর্তীতে বিদ্যালয়টি প্রথম পাঠ দান অনুমতি পায় ২০১২ সালের ১ জানুয়ারী এবং স্বীকৃতি পায় ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারী। প্রতিষ্ঠানটির ইআইআইএন নম্বর ১০৩১১২। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি ও বাঙ্গালী মিলে মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা ৪১২জন। এর মধ্যে চলতি শিক্ষা বর্ষে এসএসসিতে পরীক্ষার্থী রয়েছেন ৬২জন। বিদ্যালয়টিতে শিক্ষক, কর্মচারী ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো সবই আছে। নেই শুধু শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন। প্রতি বছর পাঠ্য বই ছাড়া আর কোন সরকারী সুযোগ সুবিধা পায় না এ বিদ্যালয়টি। পিছিয়ে পড়া দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় স্থাপিত হলেও এখান কার ছাত্র-ছাত্রী পড়াশুনা করে তারা প্রায় সবাই হতদরিদ্র পরিবারের খুব গরীব,অসহায় পরিবারের ছেলে মেয়েরা। এই বিদ্যালয়ের পড়ালেখা ও খেলাধুলায় বিদ্যালয়টি এগিয়ে আছে।

বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেনীর শিক্ষার্থী নাহিদা সুলতানা ও তৌহিদুল ইসলাম বলেন, শিক্ষকরা বিনা বেতনে আমাদেরকে পাঠদান করছেন। কিন্তু ভাবতে অবাক লাগে তারা চাকরি করেন কিন্তু বেতন পান না।

অভিভাবক মেনরুং মুরুং বলেন, আমাদের প্রত্যন্ত এলাকার অবহেলিত এ বিদ্যালয়টি এমপিও ভুক্তি না করায় আমরা পিছিয়েই রয়ে গেলাম। না জানি কখন শিক্ষকরা বিদ্যালয়টি বন্ধ ঘোষনা করে অন্যত্র চলে যান; আমেন আশঙ্কায় ভুগছি।

বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক অংমেচিং মার্মা জানায়, দীর্ঘ বছর যাবত বিনা বেতনে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাঠদান করে আসছি। সরকার আমাদের প্রতিষ্ঠানটি দ্রুত এমপিও ভুক্তি করলে মানবেতর জীবনের অবসানের পাশাপাশি পাঠদানে আরোও বেশি মনোযোগী হবো, অধিকতর উপকৃত হবে শিক্ষার্থীরা।

এদিকে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নীতিপূর্ণ বড়ুয়া বলেন, প্রতিষ্ঠানে ১২ জন শিক্ষক-কর্মচারী কর্মরত আছেন। ২০১৮ সালে জেএসসি পরীক্ষার্থী ছিল ৭৯ জন, জিপিএ ৫ প্রাপ্তসহ পাশ করেছে ৪৭জন এবং ২০১৭ সালে পরীক্ষার্থী ছিল ৮১জন, জিপিএ ৫ প্রাপ্তসহ পাশ করেছে ৭৮জন। চলতি শিক্ষা বর্ষে ৬২জন শিক্ষার্থী এসএসসিতে পরীক্ষা দিবেন। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন যাবত এমপিও না হওয়ায় শিক্ষকরা চরম হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন, পাঠদানে পূর্ণ মনোযোগী হতে পারছেন না। 

প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ ইদ্রিস কোম্পানী বলেন,এলাকায় আর কোন মাধ্যমিক স্তরের বিদ্যালয় না থাকায় এটি খুবই দরকার। শিক্ষক কর্মচারীগণ বিনা বেতনে সকল নীতিমালা অনুসরণ করে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করে আসছেন এবং প্রতিষ্ঠানটি প্রতিবছরই সন্তোষজনক ফলাফল করে আসছে বলেও জানান তিনি। মাননীয় পাবর্ত্য চট্রগ্রাম বিষায়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এর  সু-দৃষ্টি কামনা করেন।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ফরিদ উল আলম বলেন, এমপিও ভুক্তি হলে শিক্ষক-কর্মচারীদের জীবন কর্মচঞ্চল হয়ে উঠবে, এলাকার শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবেন।

লামা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. গাউছুল আজম বলেন, সরকার দ্রুত প্রতিষ্ঠানটি এমপিও ভুক্ত করলে একদিকে যেমন শিক্ষক-কর্মচারীদের মানবেতর জীবনের অবসান হয়ে পাঠদানে অধিকতর মনোযোগী হবে, তেমনি এলাকার কোমলমতি শিশুরাও বাড়ীর কাছে থেকে পরীক্ষা পাশ করে সরকারের শিক্ষার হার বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: