Tuesday, August 20, 2019

ডোমিঙ্গো বাংলাদেশ দল নিয়ে নিজের পরিকল্পনা জানালেন


বিশ্বকাপের পরে স্টিভ রোডসের সাথে সম্পর্ক চুকিয়ে দেয় বিসিবি। তার উত্তরসূরী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় প্রোটিয়া কোচ রাসেল ডোমিঙ্গোকে। আজ ঢাকায় এসেছেন টাইগারদের দায়িত্ব বুঝে নিতে। এর আগে জানিয়েছিলেন, টাইগারদের কোচ হতে পেরে তিনি আনন্দিত। বাংলাদেশ দলকে ক্রিকেট বিশ্বে সেরাদের কাতারে নিয়ে আসতে চান এই প্রোটিয়া কোচ।নতুন প্রধান কোচ দেখতে চান ধারাবাহিকতা। আগামী দুই বছরে সব সংস্করণে দলকে নিতে চান র‌্যাঙ্কিংয়ে ৪/৫ নম্বরে।
মাত্র ২৫ বছর বয়সে কোচিংকে পেশা হিসেবে নিয়েছিলেন। লম্বা সময় দক্ষিণ আফ্রিকায় বিভিন্ন পর্যায়ে কোচিং করিয়ে এবার নতুন চ্যালেঞ্জ নিতে আসছেন বাংলাদেশে। বাংলাদেশ দলকে নিয়ে তার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন তিনি।
দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই সামনে দুটি চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে কোচের জন্য। কিন্তু সময় পাচ্ছেন খুব কম। এই সময় যথেষ্ট কিনা সে বিষয়ে ডোমিঙ্গো বলেন, ঢাকা পৌঁছানোর পর অনুশীলন ক্যাম্পে ১০ দিন ছেলেদের সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ পাব। আমাদের দলে ঠিক কি আছে, না আছে সে সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাওয়ার জন্য এই সময়টা যথেষ্ট। আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলা অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং হবে। ওদের বিপক্ষে জিতবই এটা আমরা ধরে নিতে পারি না। ওদের বিশ্বমানের কিছু খেলোয়াড় আছে। আমি ওদের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচের দিকে তাকিয়ে আছি।
এর আগেও দক্ষিণ আফ্রিকার বিভিন্ন দলের হয়ে অনেকবার বাংলাদেশে এসেছেন রাসেল। বাংলাদেশ ক্রিকেট সম্পর্কে তাই খুব ভালো ধারণা আছে কোচের। ঢাকায় আসার পর প্রথম চ্যালেঞ্জ কি হতে পারে বলে জানান ডোমিঙ্গো ‘আমার মনে হয়, দ্রুত সবার সঙ্গে ভালো বোঝাপড়া করা হবে প্রথম কাজ। মাঠের বাইরের ব্যাপারগুলো হবে খুব গুরত্বপূর্ণ। মাঠে ওদের ঠিক কি প্রয়োজন সেটার দিকে নজর রাখা, ছেলেদের সঙ্গে একটা সম্পর্ক গড়া হবে খুব জরুরি। শুরুর দিকে এই কাজগুলোই করতে চাইব।’
বাংলাদেশের ফিল্ডিং নিয়ে কিছু আলোচনা আমি শুনেছি। তবে এই মুহূর্তে ফিল্ডিং নিয়ে কথা বলার মতো পর্যায়ে আমি নেই। আগে ওদের অবস্থা আমার দেখতে হবে। হতে পারে টেকনিক্যাল কিংবা মানসিক কিছু ব্যাপারে আমাদের কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। প্রথম মাসে আমি এই ব্যাপারগুলো দেখবো। এরপর আমাদের কোথায় কোথায় উন্নতির জন্য কি কি করতে হবে সেগুলো ঠিক করবো।
কোচ নিয়োগের সাক্ষাৎকারের সময় ডোমিঙ্গোর প্রেজেন্টেশনে মুগ্ধ হয়েছিল বিসিবি। কি এমন ছিলো সেই প্রেজেন্টেশনে তার উত্তরে রাসেল বলেন ‘অল্প কথায় বলা কঠিন। সেখানে দলটাকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করে গড়ে তোলার কথা বলেছি, যেন ধারাবাহিকভাবে জিততে পারে। দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা কথা বলেছি। তরুণ খেলোয়াড়দের ভবিষ্যতের জন্য তৈরি করার কথা বলেছি। আমাকে এই দুইয়ের সমন্বয় করতে হবে। বর্তমান সময়ের জন্য দলের পারফরম্যান্স, ম্যাচের ফল খুব গুরুত্বপূর্ণ। আবার একই সঙ্গে ভবিষ্যতের জন্য তরুণ খেলোয়াড়দের সুযোগ দেওয়ার পথটাও আমার বের করতে হবে। বিশ্বকাপের আগে যদি আমরা কয়েকজন তরুণ খেলোয়াড়কে কিছু ম্যাচ খেলার সুযোগ করে দিতে পারি সেটা হবে খুব ভালো একটা ব্যাপার।’
আমি যখন দক্ষিণ আফ্রিকার দায়িত্ব নিয়েছিলাম তখন আমাদের দলের জন্য সাফল্য খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। হার আমাদের দলের ওপর চাপ তৈরি করতো। কোনো কোচ তার দলকে হারার জন্য প্রস্তুত করেন না। কোচ হিসেবে আমি চেষ্টা করবো ছেলেদের তাদের কাজের ব্যাপারে ইতিবাচক রাখতে, ওদের খেলার দিকে মনোযোগী রাখতে। একই সঙ্গে দলের সাফল্যের জন্য সবার সমর্থনও খুব জরুরি।
রাসেল ডোমিঙ্গো এমন একটা সময়ে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন যখন ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সফলতম অধিনায়ক ও পেসার মাশরাফি বিন মুর্তজা অবসর নেওয়ার দ্বারপ্রান্তে। ড্রেসিংরুমে অনুপ্রেরণাদায়ী এমন একজনের অনুপস্থিতি কিভাবে সামলাবেন তা ভেবে রেখেছেন সদ্য নিয়োগ পাওয়া এই কোচ। সিনিয়র লিডারশিপ গ্রুপ থাকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। অধিনায়ক একা সিদ্ধান্ত নেবে ব্যাপারটা এমন নয়। এটা ঠিক যে, অধিনায়কই বেশিরভাগ সিদ্ধান্ত নেবে তবে লিডারশিপ গ্রুপও সমান গুরুত্বপূর্ণ। আমি যখন ওদের সঙ্গে কাজ করা শুরু করব ওখানে কাজগুলো কিভাবে হয় তা বোঝার চেষ্টা করব। এরপর মাঠের বাইরে-ভেতরের জন্য সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ করবো।
কখনও আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা হয়নি। এরপরও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বেশ সফল একজন কোচ তিনি। নিজের কোচিং ক্যারিয়ার আর সাফল্যের গল্প বলতে গিয়ে ডোমিঙ্গো বলেন, ‘আমি সব সময়ই মানুষের সঙ্গে কাজ করতে আর নতুন-নতুন সম্পর্ক তৈরি করতে ভালোবাসি। কোচ হিসেবে আমি অন্য মানুষের কাছ থেকে শেখার সুযোগটা কাজে লাগাই। কোচ হিসেবে আমি বুঝতে পারি, একজন ক্রিকেটারের পরের ধাপে যেতে ঠিক কী প্রয়োজন। আমার মনে হয়, এই ব্যাপারটাই আমাকে কোচ হওয়ার দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। আমি আশাবাদী, এই অভিজ্ঞতা বাংলাদেশ দল আর ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে কাজ করতে সহায়তা করবে।’
বাংলাদেশের কোচ হতে চাইলেন কেন তিনি? তার জবাবে বলেন ‘আমি দক্ষিণ আফ্রিকা ‘এ’ দলের সঙ্গে কাজ করছিলাম। এটা ছিল জাতীয় দলের ঠিক নিচে। জাতীয় দলের কিছু খেলোয়াড়ও এই দলটিতে ছিল। কাজটা আমি খুব উপভোগ করছিলাম। বাংলাদেশ এমন একটা দল যারা গত পাঁচ বছরে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি উন্নতি করেছে। ওরা এই সময়ে নিজেদের পারফরম্যান্সেরও বেশ উন্নতি করেছে।’
নতুন প্রতিভা খুঁজে বের করার ব্যাপারে রাসেলের সুনাম আছে। উঠতি প্রতিভাদের পথ দেখানোর ক্ষেত্রেও তিনি পারদর্শী। বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় ক্রিকেটারদের নিয়ে তার পরিকল্পনা বললেন ডোমিঙ্গো, ‘অবশ্যই আমি বয়সভিত্তিক দলগুলোর ম্যানেজার ও কোচের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটাব। প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ওঠে আসা সেরা খেলোয়াড়দের সঙ্গে আমি যোগাযোগ রাখবো। আমার মনে হয়, পরের দলটা কেমন হতে পারে বুঝতে পারা সব সময়ই খুব ভালো একটি ব্যাপার।’
পাশাপাশি ঘরোয়া ক্রিকেটের খেলা মাঠে বসে দেখব। দেশের সেরা লিগে (ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ) নতুন একটা ছেলে কিভাবে খেলে সেটা সরাসরি দেখব। আমার ধারণা, ঘরোয়া ক্রিকেটে দলগুলো ভালো কোচের অধীনে আছে। আমি জানি, ঢাকা লিগে দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়।
চার্ল ল্যাঙ্গাভেল্ট, নিল ম্যাকেঞ্জির সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকা দলে কাজ করেছেন। স্বদেশি কোচদের পাশাপাশি নিউ জিল্যান্ডের ড্যানিয়েল ভেটোরিকেও পাচ্ছেন কোচিং স্টাফ হিসেবে। ভেটোরির সাথে কিভাবে কাজ করবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন ‘ভেটোরির সঙ্গে এর আগে কয়েকবার দেখা হয়েছে আমার। আমরা ছেলেদের জন্য সেরা সহায়তাটা দেওয়ার চেষ্টা করবো। যদি ভেটোরি তরুণ খেলোয়াড়দের সঙ্গে বেশি সময় কাটায় তাহলে তারা ওর কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারবে। ’
দুই বছরের চুক্তির মেয়াদে বাংলাদেশ দলকে কোথায় দেখতে চান ডোমিঙ্গো? এর জবাবে ডোমিঙ্গো: আমার মনে হয় অবশ্যই র‌্যাঙ্কিংয়ে চার-পাঁচে যাওয়া উচিত। বিশেষ করে ওয়ানডেতে আমাদের অবশ্যই সেরা চারে থাকার সামর্থ্য আছে। এটা হবে বাস্তবসম্মত একটা লক্ষ্য। আমি জানি, এটা কঠিন হবে। লক্ষ্য পূরণ করতে আমাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। পরের ধাপে যেতে বাংলাদেশকে পথ দেখাতেই এসেছি আমি।

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: