Thursday, August 15, 2019

মালয়েশিয়ায় ক্ষোভের মুখে জাকির নায়েক

Image result for ক্ষোভের মুখে জাকির নায়েক

বিদেশ ডেস্ক
জাতিগত চীনা ও ভারতীয় সংখ্যালঘুদের বিতাড়নের পরামর্শ দিয়ে মালয়েশিয়ায় ক্ষোভ উস্কে দিয়েছেন ভারতের বিতর্কিত ইসলাম ধর্ম প্রচারক জাকির নায়েক। ক্ষোভ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে দেশটির মন্ত্রিসভা তার স্থায়ী আবাসিকতা বাতিলের সম্ভাবনার কথা ভাবছে। অন্য রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি অন্তত চার মন্ত্রী তাকে প্রত্যার্পণের আহ্বান জানিয়েছেন বলে খবর দিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। তবে সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে নিজের বক্তব্য ভুলভাবে উদ্ধৃত করার অভিযোগ তুলেছেন জাকির নায়েক। তার দাবি রাজনৈতিক ফায়দা নিতে মালয়েশিয়ার সরকারকে করা প্রশংসা ভুলভাবে উদ্ধৃত করেছে সংবাদমাধ্যম।

মালয়েশিয়ায় ধর্ম ও জাতিগত ইস্যু স্পর্শকাতর বলে বিবেচনা করা হয়। দেশটির ৬০ শতাংশ মানুষ মুসলমান আর বাকিরা চীন ও ভারতের নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী। এদের বেশিরভাগই হিন্দু।

সম্প্রতি ভারতের সংখ্যালঘু মুসলমানদের চেয়ে শতগুণ বেশি অধিকার মালয়েশিয়ার সংখ্যালঘু হিন্দুরা ভোগ করছে বলে মন্তব্য করেন জাকির নায়েক। তিনি বলেন, তারা ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে সমর্থন করে, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে নয়। হিন্দুদের নিয়ে জাকিরের করা মন্তব্যের জেরে তাকে মালয়েশিয়া ছেড়ে যাওয়ার কথা বলা হলে তিনি জাতিগত সংখ্যালঘুদের লক্ষ্যবস্তু বানান। গত ৮ আগস্ট কেলানতান প্রদেশে এক আলোচনায় তিনি বলেন, প্রথমে জাতিগত সংখ্যালঘুদের চলে যেতে হবে কারণ তারা মালয়েশিয়ার অতিথি। তিনি বলেন, আপনারা জানেন কেউ কেউ আমাকে অতিথি বলে। সুতরাং আমি বলি আমার আগে চীনারা এখানকার অতিথি। নতুন অতিথিকে আপনি যদি চলে যেতে বলেন, তাহলে পুরনো অতিথিদেরও ফিরে যেতে বলুন। জাকির বলেন, ‘চীনারা এখানে জন্ম নেয়নি, তাদের বেশিরভাগই। তারা নতুন প্রজন্ম হতে পারে অবশ্যই’।

বিতর্কিত এই ইসলাম ধর্ম প্রচারকের বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলে বুধবার মালয়েশিয়ায় টুইটারে ট্রেন্ডিংয়ে তৃতীয় অবস্থানে চলে আসে জাকির নায়েক হ্যাশট্যাগ। এর প্রতিক্রিয়ায় সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে তার বক্তব্য ভুলভাবে উদ্ধৃত করার অভিযোগ করেন জাকির নায়েক। বুধবার এক বিবৃতিতে নায়েক বলেন, ‘ইসলামিক মনোভাব এবং হিন্দু সংখ্যালঘুদের প্রতি ন্যায্য আচরণের জন্য জন্য মালয়েশিয়ার সরকারের প্রতি আমার প্রশংসাকে রাজনৈতিক ফায়দার জন্য ভুলভাবে উদ্ধৃত করা হয়েছে আর সৃষ্টি করা হয়েছে সাম্প্রদায়িক বিভাজন’।

তবে মালয়েশিয়ার নিউজ পোর্টাল মালয়সিয়াকিনিতে প্রকাশিত বক্তব্যের রেকর্ডিংয়ে তাকে মালয়েশিয়ার হিন্দু ও জাতিগত চীনাদের নিয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত মন্তব্য করতে দেখা গেছে।

জাকির নায়েককে স্থায়ী আবাসিকতার অনুমোদন দেয় মালয়েশিয়ার আগের সরকার। গত তিন বছর ধরে দেশটিতে বসবাস করছেন তিনি। বুধবার মালয়েশিয়ার মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদকে জাকির নায়েকের উত্তেজক বক্তব্যের জন্য তাকে প্রত্যার্পণ প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন দুই মন্ত্রী।

যোগাযোগ ও মাল্টিমিডিয়া মন্ত্রী গোবিন্দ সিং দেও এবং মানবসম্পদ মন্ত্রী এম কুলাসেগারান এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা আমাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছি। আর তা হলো অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে হবে এবং জাকির নায়েককে আর মালয়েশিয়ায় থাকতে দেওয়া যাবে না। প্রধানমন্ত্রী আমাদের উদ্বেগ আমলে নিয়েছেন। বিষয়টি তার ওপর ছেড়ে দিয়েছি আর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব তাকে দেওয়া হয়েছে’।

মন্ত্রিসভার বৈঠকের বিষয়ে ওয়াকিবহাল একটি সূত্র আল জাজিরাকে জানিয়েছেন, মাহাথির বলেছেন তিনি সমস্যার সমাধান করবেন। তবে বিস্তারিত কিছু জানাননি বলে জানিয়েছে ওই সূত্রটি। জাকির নায়েকের বিষয়ে মন্ত্রিসভা কখন সিদ্ধান্ত নেবে তা এখনও স্পষ্ট নয়।

মালয়েশিয়ার সর্বকনিষ্ঠমন্ত্রী সৈয়দ সাদিক আবদুল রাহমান জাকির নায়েককে প্রত্যার্পণের আহ্বানে সমর্থন দিচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘যআমি বহু ভারতীয় ও চীনাদের জানি যারা এই দেশকে ভালোবেসে এই দেশের জন্য জীবন দিতে চান। আমার সাথী মালয়েশিয়ানদের অতিথি হিসেবে চিন্তা করাও হাস্যকর’। অন্য তিন মন্ত্রী জাকির নায়েকের প্রত্যার্পণ চেয়েছে আপনি তাতে সমর্থন করেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে এই মন্ত্রী বলেন, হ্যাঁ। একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে তিনি লেখেন, ‘আমাদের চীনা ও ভারতীয় ভাই বোনদের ওপর কোনও আক্রমণ পুরো মালয়েশিয়ার বিরুদ্ধে আক্রমণের শামিল। আল্লাহর দোহাই তারা আমাদের পরিবার। যথেষ্ট হয়েছে’।

পানি, ভূমি ও প্রাকৃতিক সম্পদ বিষয়ক মন্ত্রী জেভিয়ার জয়াকুমার বলেন, ‘মালয়েশিয়া যদি জাকির নায়েকের বক্তব্যকে অগ্রাহ্য করে থাকতে দেয় তাহলে সে তার কাজ করতে থাকবে। যাতে মালয়েশিয়ায় সম্ভাব্য জাতিগত ও ধর্মীয় বিভাজন সৃষ্টি হতে পারে’। তিনি বলেন, ‘আমাদের এমন ব্যক্তিকে দরকার নেই যিনি মালয়েশিয়ার মুসলমান ও অমুসলমানদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টিকারী মন্তব্য করে বিক্ষোভ উস্কে দেবে’।

তবে প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদকে উদ্ধৃত করে মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বার্নামা মঙ্গলবার রাতে জানিয়েছে, ভারতে মৃত্যুর আশঙ্কা থাকায় জাকির নায়েককে সেখানে ফেরত পাঠানো হবে না। যদি অন্য কোনও দেশ তাকে নিতে চায় তাহলে তাদের স্বাগত জানানো হবে।

প্রসঙ্গত, ভারতের আদালতে অর্থপাচার ও ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানোর মধ্য দিয়ে জিহাদি কার্যক্রম উদ্বুদ্ধ করার অভিযোগ রয়েছে জাকিরের বিরুদ্ধে। দিল্লির পক্ষ থেকে তাকে ফেরত পাঠানোর আনুষ্ঠানিক আবেদন করা হলে ২০১৮ সালে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ এ ব্যাপারে অনিচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন।

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: