Wednesday, August 21, 2019

২১ আগস্ট গ্রে’নেড হা’মলার ১৫ বছর: কী হয়েছিল সেদিন

২১ আগস্ট গ্রে'নেড হা'মলার ১৫ বছর: কী হয়েছিল সেদিন

*আজ ভয়াল ২১ আগস্ট। ২০০৪ সালের এই দিনে রাজধানীর ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের শোভাযাত্রা-পূর্ব সমাবেশে দু’র্বৃত্তদের গ্রে’নেড হা’মলায় ঝরে গেছে ২৪টি জীবন। আহত হয় পাঁচ শতাধিক। সন্ত্রা’সের বিরুদ্ধে আয়োজিত সেই সমাবেশ বিকাল ৪টা থেকেই আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী এবং সাধারণ মানুষে কানায় কানায় ভরে ওঠে। স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে বঙ্গবন্ধু এভিনিউসহ আশপাশের এলাকা।

*আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিবা পরিবহনের খোলা ট্রাকে বানানো উন্মুক্ত মঞ্চে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা। বিকাল ৫টার দিকে বুলে’টপ্রুফ গাড়িতে সমাবেশস্থলে পৌঁছান তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। প্রায় ২০ মিনিট বক্তৃতা দেন তিনি। বিকাল ৫টা ২২ মিনিটে বক্তৃতা শেষে সন্ত্রা’সবিরোধী মিছিল শুরুর ঘোষণা দেওয়ার ঠিক আগমুহূর্তে শুরু হয় একের পর এক পৈ’শাচিক গ্রে’নেড হামলা। মুহূর্তে মৃ’ত্যুপুরীতে পরিণত হয় গোটা বঙ্গবন্ধু এভিনিউ। সন্ত্রাসবিরোধী সভা কভার করতে যাওয়া ফটোসাংবাদিকদের ছবি তোলার অনুরোধ র’ক্ষা করতে গিয়ে প্রায় এক মিনিট অপেক্ষা করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। ওই এক মিনিট অপেক্ষা না করলে হয়তো রচিত হতো অন্য ইতিহাস। ভাগ্যক্রমে বঙ্গবন্ধুকন্যা বেঁ’চে গেলেও নি’হত হন আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমানসহ ২৪ জন। আ’হত হন পাঁচ শতাধিক মানুষ।

*বি’স্ফোরিত গ্রে’নেডের ধোঁ’য়া ও পুলিশের ছোড়া কাঁ’দুনে গ্যাসে আচ্ছন্ন হয়ে যায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউ ও তার আশপাশ। শেখ হাসিনার গাড়ি লক্ষ্য করে গু’লিবর্ষণ শুরু হয়। নি’ক্ষিপ্ত গ্রে’নেডগুলোর মধ্যে তিনটি ফাটেনি। শত শত মানুষের আ’র্তচিৎকার, ছড়িয়ে থাকা ছিন্ন’ভিন্ন দেহ, র’ক্ত আর পো’ড়া গ’ন্ধ সব মিলিয়ে বী’ভৎস অবস্থার সৃষ্টি হয় পুরো এলাকায়। আ’হতদের সাহায্য করার বদলে বি’ক্ষুব্ধ ও আ’হত মানুষের ওপর বেপরোয়া লা’ঠিপেটা আর কাঁদু’নে গ্যা’স ছোড়ে তৎকালীন সরকারের পুলিশ। মুহূর্তের মধ্যে দোকানপাট ও যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আ’তঙ্কে এলাকা ছেড়ে পা’লাতে শুরু করে সবাই।

*নৃ’শংস সেই হা’মলার পঞ্চদশ বার্ষিকী আজ। দলীয় সভানেত্রীকে বাঁচানোর জন্য ট্রাকের ওপর মানবব’র্ম রচনা করেছিলেন আওয়ামী লীগের নেতারা। সেদিনের গ্রে’নেড হা’মলায় গু’রুতর আহত আইভি রহমান ৫৮ ঘণ্টা মৃ’ত্যুর সঙ্গে ল’ড়াই করে মারা যান ২৪ আগস্ট। তবে ওই দিনই নি’হত হন মোস্তাক আহমেদ সেন্টু, ল্যান্স করপোরাল (অব.) মাহবুবুর রশীদ, রফিকুল ইসলাম (আদা চাচা), সুফিয়া বেগম, হাসিনা মমতাজ রীনা, লিটন মুন্সী ওরফে লিটু, রতন সিকদার, মো. হানিফ ওরফে মুক্তিযোদ্ধা হানিফ, মামুন মৃধা, বেলাল হোসেন, আমিনুল ইসলাম, আবদুল কুদ্দুস পাটোয়ারী, আতিক সরকার, নাসিরউদ্দিন সর্দার, রেজিয়া বেগম, আবুল কাসেম, জাহেদ আলী, মমিন আলী, শামসুদ্দিন, আবুল কালাম আজাদ, ইছহাক মিয়া এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও দুজন।

*হামলায় আ’হতের মধ্যে ছিলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত জিল্লুর রহমান, আমির হোসেন আমু, প্রয়াত আবদুর রাজ্জাক, আওয়ামী লীগের তদানীন্তন সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত আবদুল জলিল, প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, প্রয়াত মো. হানিফ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর, কাজী জাফর উল্লাহ, ওবায়দুল কাদের, ড. হাছান মাহমুদ, মাহমুদুর রহমান মান্না, আবদুর রহমান, আখতারুজ্জামান, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, অ্যাডভোকেট রহমত আলী, সাঈদ খোকনসহ পাঁচ শতাধিক আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষ।

*দীর্ঘদিন চিকিৎসায় অনেকে কিছুটা সুস্থ হলেও প’ঙ্গুত্বের অভিশাপ নিয়ে বেঁ’চে থাকতে হচ্ছে অনেককে। সেদিনের সেই দুঃসহ স্মৃতি প্রতিনিয়ত তা’ড়িয়ে বেড়াচ্ছে তাদের। বিশ্লেষকেরা বলছেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রা’ণনাশের উদ্দেশ্যেই গ্রে’নেড হা’মলা চালানো হয়েছিল। ফটোসাংবাদিকদের অনুরোধে সায় না দিলে প্রয়াত আইভি রহমানের জায়গায় লা’শ হতেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। অথচ বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে সংঘটিত এ হ’ত্যাকাণ্ড নিয়ে সেদিন সংসদে কোনো শো’ক প্রস্তাবও তুলতে পারেনি আওয়ামী লীগ। শো’ক প্রস্তাব তুলতেই দেওয়া হয়নি। সেদিন চারদলীয় জোট সরকার গ্রে’নেড হা’মলার বিষয়টি এড়িয়ে যেতে নানা কৌশলের আশ্রয় নিয়েছিল। সিআইডিকে দিয়ে সাজানো হয়েছিল জজ মিয়া নাটক।

*কর্মসূচি: একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলা দিবস উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে আওয়ামী লীগ। দিবসটি উপলক্ষে আলোচনা সভা, নি’হতদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন, মোমবাতি প্রজ্বালনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
*সকাল ৯টায় ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গ্রে’নেড হা’মলায় নি’হতদের স্মরণে নির্মিত বেদিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করা হবে। বিকাল ৪টায় কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া সভায় দেশের বরেণ্য বুদ্ধিজীবী ও জাতীয় নেতারা বক্তব্য রাখবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ২১ আগস্ট গ্রে’নেড হা’মলা দিবসের কর্মসূচি পালন করার জন্য আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনগুলোর সব স্তরের নেতা-কর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: