Wednesday, July 24, 2019

ভূমিকম্পের আগেই মোবাইলে বাজবে এলার্ম

ভূমিকম্পের আগেই মোবাইলে বাজবে এলার্ম

কোনো পূর্বাভাস ছাড়াই আঘাত হানে ভূমিকম্প। এ ভূমিকম্প আসার অন্তত দুই মিনিট আগে যদি মোবাইল ফোনে বাজে ইমাজেন্সি এলার্ম, তাহলে কেমন হয়? এমনি এক যন্ত্র উদ্ভাবন করেছেন ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজের এইচএসসি (বিজ্ঞান) পড়ুয়া তিন সহপাঠী রনৎ দাস প্রাঙ্গন, নাহিদ হাসান শুভ্র ও সাজিদ হাসান নাঈম।
উদ্ভাবক রনৎ দাস প্রাঙ্গন জানান, এটি একটি ভূমিকম্প সতর্কীকরণ ব্যবস্থা। যা তাদের ডেভেলপ করা ‘আভাস’ নামে স্মার্টফোন অ্যাপে টেকনোলজি, সেন্সর ও একটি রিয়েলটাইম সার্ভারের সমন্বয়ে তৈরি। রিয়েলটাইম সার্ভারটি সবসময় আপডেট হতে থাকে। ভূমিকম্প আঘাত হানার প্রায় দুই মিনিট আগে এটি ইউজারের ফোনে নোটিফিকেশন ও এলার্ম দিতে সক্ষম।
প্রাঙ্গন বলেন, 'ভূমিকম্পের কম্পন অনুভব করার জন্য কিছু সেন্সর মাটির নিচে স্থাপন করা হবে। সেই সেন্সরগুলো একটি রিয়েলটাইম সার্ভারের সাথে যুক্ত থাকবে। আমরা যে অ্যাপটি ডেভেলপ করেছি, সেটি সার্ভার থেকে ডাটা সংগ্রহ করতে পারবে এবং সংগৃহীত ডেটার ওপর ভিত্তি করে নোটিফিকেশন ও এলার্ম দিতে পারবে।'
নাহিদ হাসান শুভ্র জানান, গবেষণায় দেখা গেছে ভূমিকম্প সাধারণত টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষের ফলে হয়ে থাকে। এই সংঘর্ষের সময় সাধারণত দুই ধরনের ওয়েভ উৎপন্ন হয়। এদের মধ্যে প্রাইমারি ওয়েভের বেগ সবচেয়ে বেশি। তারপরই আসে সেকেন্ডারি ওয়েভ। যার বেগ প্রাইমারি ওয়েভের প্রায় অর্ধেক কিন্তু অনেক বেশি ধ্বংসাত্মক। ভূমিকম্পের মূল ক্ষতিসাধন করা ওয়েব এটিই।’
শুভ্র বলেন, 'যদি সেন্সরগুলোর মাধ্যমে প্রাইমারি ওয়েভ শনাক্ত করা যায় তাহলে সঙ্গে সঙ্গে অ্যাপের মাধ্যমে জনগণকে জানিয়ে দেওয়া যাবে। ফলে সেকেন্ডারি ওয়েভ আসার আগেই সাধারণ মানুষ কিছু বাড়তি সময় পাবেন নিজেদের নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্য। সেকেন্ডারি ওয়েভটি আসার আগে যে সময় পাওয়া যাবে সেই সময়টি নির্ভর করে ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল এবং জনগণের অবস্থানের উপর।'
কিভাবে বাংলাদেশে এর বাস্তবায়ন সম্ভব- এমন প্রশ্নের জবাবে রনৎ-এর সহযোগী বন্ধু সাজিদ হাসান নাঈম বলেন, 'দেশের সীমান্তবর্তী ২৫টি অঞ্চলকে এই সিস্টেমের আওতাভুক্ত করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এছাড়াও দেশের অভ্যন্তরীণ ফল্টলাইনের কথা বিবেচনা করে আরও পাঁচটি জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। যেখান থেকে ভূমিকম্পের সিগন্যাল পাবে আভাস নামের এই স্মার্ট ফোন অ্যাপ, সঙ্গে সঙ্গে বেজে উঠবে এলার্ম।'
তিনি বলেন, ‘প্রতিটি সেন্সর তৈরিতে খরচ পরবে মাত্র এক হাজার টাকা এবং সিস্টেমটি স্থাপন করতে খরচ পরবে সাড়ে সাত হাজার টাকা।’
এমন উদ্ভাবনের প্রশংসা করে ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের লেকচারার শ্রাবন্তী দত্ত বলেন, 'বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে রিসার্চভিত্তিক পড়াশোনা হয়। আমাদের কোর্সভিত্তিক পড়াশোনার মাঝেও যে আমাদের শিক্ষার্থীরা এ রকম উদ্ভাবনী ক্ষমতা দেখাচ্ছে, সেটি অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার।'
এই উদ্ভাবন কতটা ফলপ্রসূ হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'আমরা যদি দেখতে চাই এটা কতখানি কাজ করবে সেজন্য আমাদের ইমপ্লিমেন্ট পর্যন্ত যেতে হবে। তবে যতটুকু পর্যন্ত তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছে তাতে আমরা ৩-৪ মিনিটের মধ্যে একটা সতর্কবার্তা পেয়ে যাব। কিন্তু কথা হচ্ছে এই সময়ের মাঝে আমাদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কতটা কমাতে পারবো। এটার আরও কিছু ইম্প্রুভ করতে হবে। সেজন্য প্রয়োজনীয় সাপোর্ট তাদেরকে করতে হবে।'
গত এক বছর যাবত যন্ত্রটি নিয়ে গবেষণা করছেন এ তিন উদ্ভাবক। তারা চান এ বিষয়ে যেন তাদের সরকারিভাবে আরও গবেষণার সুযোগ করে দেওয়া হয়। পাশাপাশি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে যন্ত্রটি সারাদেশে বাণিজ্যিকভাবে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব বলে বিশ্বাস তরুণ এই উদ্ভাবকদের।
উল্লেখ্য, গত জুন মাসে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের আয়োজনে অনুষ্ঠিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলায় জাতীয় পর্যায়ে তৃতীয় স্থান অর্জন করে প্রাঙ্গন, শুভ্র ও নাঈমের প্রকল্প। এর আগে জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে তারা প্রথম স্থান অর্জন করেন।

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: