Sunday, July 28, 2019

ডক্টর, ডাক্তার, ব্যারিস্টার, আইনজীবী নামের অংশ নয়: হাই কোর্ট

ডক্টর, ডাক্তার, ব্যারিস্টার, প্রকৌশলী, কৃষিবিদ, আইনজীবী নামের অংশ নয় বলে এক পর্যবেক্ষণে জানিয়েছেন হাই কোর্ট। মামলার রায় বা আদেশে নিম্ন আদালতের বিচারকদের নামের আগে ‘ড.’ (ডক্টরেট) বা ‘ব্যারিস্টার’ যুক্ত না করার বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন হাই কোর্ট।
হাই কোর্ট বলছেন, ‘ডক্টর (ড.)’ গবেষণামূলক উচ্চতর শিক্ষার একটি ডিগ্রি। ‘ব্যারিস্টার’ পেশাগত বিশেষ একটি কোর্স। ফলে ড. বা ব্যারিস্টার কখনোই কোনো ব্যক্তির নামের অংশ হতে পারে না।
এছাড়াও হাই কোর্ট বলছেন, আন্তর্জাতিক পাসপোর্টে কখনই নামের অংশ হিসেবে শিক্ষাগত যোগ্যতা/ডিগ্রি বা অন্যান্য পদবি যেমন প্রকৌশলী, ডাক্তার, কৃষিবিদ, আইনজীবী প্রভৃতি ব্যবহারের সুযোগ নাই।
গত ৭ জুলাই বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের দেয়া পর্যবেক্ষণসহ প্রকাশিত পূর্ণাঙ্গ রায়ে এমন নির্দেশনা দেন আদালত। বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে এ রায় প্রকাশ করা হয়।
রায়ে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাই কোর্ট বিভাগের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিচারপতির উচ্চ শিক্ষার ডিগ্রি এবং উচ্চ পেশাগত কোর্স সম্পন্নের অভিজ্ঞতা রয়েছে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিগণ রায় বা আদেশে তাদের নামের আগে ঐসব ডিগ্রি বা কোর্সের বিষয় কখনো উল্লেখ করেন না। এছাড়া, প্রথা অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের ক্যালেন্ডার, কজলিস্টসহ দাপ্তরিক কাজেও তা উল্লেখ করা হয় না। এ অবস্থায় নিম্ন আদালতের বিচারকগণের মধ্যে যাদের উচ্চতর ডিগ্রি রয়েছে বা পেশাগত উচ্চতর কোর্স সম্পন্ন করেছেন বা করবেন তারা মামলার রায় বা আদেশে নামের অংশ হিসেবে ডিগ্রি উল্লেখ করা বাঞ্ছনীয়/কাম্য নয়। এ কারণে সংশ্লিষ্ট বিচারকগণ নিজ বুদ্ধিমত্তা ও প্রজ্ঞা দিয়ে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে নামের অংশ হিসেবে উচ্চতর ডিগ্রির ব্যবহার থেকে নিজেদের বিরত রাখবেন।
রায়ে আরও বলা হয়, প্রশাসন ও অন্যান্য ক্যাডারের সদস্যদের নিয়ন্ত্রণ নির্বাহী বিভাগ এবং সংশ্লিষ্ট নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের হাতে। তাদের শৃঙ্খলাসহ সামগ্রিক বিষয় দেখভাল করার ব্যবস্থাও ভিন্ন। সুতরাং প্রশাসন বা অন্য ক্যাডারের কোনো কর্মকর্তার নামের অংশ হিসেবে উচ্চতর ডিগ্রি উল্লেখের বিষয়ে বিচার বিভাগের কোনোরূপ মন্তব্য হবে অনাকাঙ্ক্ষিত। তবে আমাদের এ কথা বলতে দ্বিধা নেই যে, ‘আপন শ্রেষ্ঠত্ব সম্বন্ধে অতিরিক্ত প্রত্যয় ব্যক্ত করার’ মানসিকতা থেকেই কারো কারো মধ্যে অর্জিত ডিগ্রি নামের অংশ হিসেবে ব্যবহারের এ প্রবণতা।
রায়ে বলা হয়, প্রশ্ন উত্থাপিত হতে পারে যে, প্রশাসন বা অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তাসহ অনেকেই নামের অংশ হিসেবে এসব ডিগ্রি উল্লেখ করে থাকেন। তাহলে বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের উচ্চতর ডিগ্রি উল্লেখ ও ব্যবহারে বাধা কোথায়। এ প্রসঙ্গে আমাদের সুচিন্তিত অভিমত হলো যে, একজন বিচারককে কখনোই প্রশাসন বা অন্য কোনো ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সাথে তুলনা করা উচিত নয়। এতে বিচার বিভাগ ও বিচারকগণের স্বকীয়তা ও মহিমাই প্রশ্নবিদ্ধ হবে। ফলে প্রশাসন বা অন্য ক্যাডারের কোনো কর্মকর্তা কর্তৃক নামের অংশ হিসেবে উচ্চ ডিগ্রির ব্যবহার বা পেশাগত কোর্সের উল্লেখ বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তার নিকট অনুসরণীয় বা অনুকরণীয় হওয়ার যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণ হতে পারে না।
রায়ে হাই কোর্ট বলেন, নিম্ন আদালতের বিচারকগণের উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ ও ডিগ্রি লাভ নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। এ বিষয়টিকে সব মহলের উত্সাহ প্রদান এবং ভবিষ্যতে নিম্ন আদালতের বিচারকদের মধ্য থেকে অধিক সংখ্যক বিচারক যাতে উচ্চতর শিক্ষা ও ডিগ্রি অর্জন করতে পারেন, সে বিষয়ে সরকার ও সুপ্রিম কোর্টের সার্বিক পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন। কিন্তু বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনার সময় আদেশ বা রায়ে বিচারকের নামের আগে অর্জিত ডিগ্রি নামের অংশ হিসেবে ব্যবহার করা সমীচীন নয়। মামলা রায় বা আদেশে শুধু বিচারকের নাম এবং তিনি কোন আদালতের বিচারক তা উল্লেখ থাকাই সঙ্গত।
উল্লেখ্য, ধানমন্ডি থানার একটি হত্যা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের পাঁচ জন সাক্ষীকে পুনরায় জেরার আবেদন খারিজ করে দেন ঢাকার বিশেষ দায়রা জজ ড. মো. আখতারুজ্জামান। ওই আদেশের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে আসেন মামলার আসামি ইনজামামুল ইসলাম ওরফে জিসান। মামলার নথি পর্যালোচনায় হাই কোর্ট দেখতে পান যে, সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারক নামের আগে ‘ড.’ ডিগ্রি ব্যবহার করেছেন। এ অবস্থায় গত ৭ জুলাই হাই কোর্ট বিচারকদের নামের আগে এ ধরনের ডিগ্রি ব্যবহার না করার নির্দেশনা দেন। বৃহস্পতিবার পর্যবেক্ষণসহ পূর্ণাঙ্গ ওই রায় প্রকাশ করা হয়।

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: