Tuesday, July 23, 2019

প্রিয়া সাহার ৩৭ মিলিয়নের হিসেব মিলিয়ে দিলেন কাজল দেবনাথ

প্রিয়া সাহার ৩৭ মিলিয়নের হিসেব মিলিয়ে দিলেন কাজল দেবনাথ

৩৭ মিলিয়ন সংখ্যালঘু গুম হওয়ার অভিযোগ তুলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল ট্রাম্পের কাছে নালিশ দিয়েছেন বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টন ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহা। এই ঘটনায় গতকাল থেকে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
গত বুধবার মার্কিন টিভি চ্যানেল এবিসি নেটওয়ার্কের চ্যানেল এবিসি ফোর ইউটাহ প্রকাশ করে। এর পরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে সেটি।
এদিকে, হোয়াইট হাউসের ওই অনুষ্ঠানে কি করে প্রিয়া সাহা গেলেন সে বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের শীর্ষ নেতা কাজল দেবনাথ।
এক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাতে কাজল দেবনাথ বলেন, প্রিয় সাহা কীভাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে গেছেন তা তার সংগঠন জানে না। এছাড়া ওই গণমাধ্যমকে ট্রাম্পকে দেয়া প্রিয়া সাহার বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেন সংগঠনটির এ শীর্ষ নেতা।
তিনি বলেন, ‘একটি ইংরেজি শব্দে ভুল করেছেন প্রিয়া সাহা। তিনি ডিসঅ্যাপিয়ার্ড (বিচারবহির্ভূত গুম) বলেছেন, যা হতে পারত মিসিং পপুলেশন (হারিয়ে যাওয়া জনগোষ্ঠী)।’
১৪৪৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত যে জনগোষ্ঠী বাংলাদেশ থেকে হারিয়ে গেছে, সেই পরিসংখ্যানই প্রিয়া সাহা দিয়েছেন বলে ধারণা করছেন তিনি।
এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ‘ট্রাম্পকে প্রিয়া বলেছেন- ৩৭ মিলিয়ন (তিন কোটি ৭০ লাখ) ডিসঅ্যাপিয়ার্ড। এটি হবে মিসিং পপুলেশন। ১৯৪৭ সাল থেকে যদি আমরা হিসাব করি, এই ভূখণ্ড থেকে প্রায় তিন কোটি ৭০ লাখ মানুষ হারিয়ে গেছে। ওই সময় দেশে হিন্দু ছিল মোট জনসংখ্যার ২৯ শতাংশ। ২০১১ সালের সর্বশেষ আদমশুমারিতে এ সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ৯ দশমিক ৭ শতাংশ। তা হলে এই ৬৪ বছরে ২০ শতাংশ হিন্দু জনগোষ্ঠী হারিয়ে গেছে। হিসাবটি প্রিয়া সাহার বলা অঙ্কের কাছাকাছি।’
এরপর তিনি বলেন, ‘আবার প্রিয়া বলেছে- এখন দেশে ১৮ মিলিয়ন (এক কোটি ৮০ লাখ) হিন্দু আছে। তবে আমরা বলছি সে সংখ্যা এক কোটি ৫০ লাখ। সেটিও কাছাকাছিই বটে। আসলে এই পরিসংখ্যানটি ১৯৪৭ সাল থেকে না বলায় তার বক্তব্য নিয়ে এত বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে।’
প্রিয়া সাহার বাড়ি পুড়িয়ে দেয়ার প্রসঙ্গে কাজল দেবনাথ বলেন, ‘এটি তো সত্য যে, গত মার্চ মাসে তার বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। জমি কেড়ে নেয়ারও বিষয় ঘটেছে। এটি নিয়ে তিনি হইচইও করেছেন। অনেকের কাছে গেছেন। এ সংক্রান্ত খবরও পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।’
তবে প্রিয়া সাহার বক্তব্যের ব্যাখ্যা যাই হোক না কেন, ট্রাম্পের কাছে গিয়ে তার নালিশ করাটা মোটেই ঠিক হয়নি বলে মত দেন কাজল দেবনাথ।
তিনি বলেন, ‘অযৌক্তিক কাজ করেছেন প্রিয়া। আমাদের সংগঠন থেকে কেউ এটি করতে পারে না। তবে প্রিয়া সাহা এখনও দেশে ফেরেননি। ফিরলে পুরো বিষয়টি জেনে আমরা সংবাদ সম্মেলন করব।’
বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহা। তার এমন অযৌক্তিক কাণ্ডের দায় সংগঠন নেবে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, প্রিয়া সাহা আমাদের সংগঠনের অন্যতম সাংগঠনিক সম্পাদক, তবে তিনি আমাদের মনোনীত প্রতিনিধি ছিলেন না।’
তিনি যোগ করেন, ‘ট্রাম্পের ওই অনুষ্ঠানের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের কাছে তিনজনের নাম চেয়েছিল। হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান- এই তিন সম্প্রদায় থেকে যাদের মনোনীত করেছিলাম, তারা হলেন- নির্মল রোজারিও, নির্মল চ্যাটার্জি ও সুজিত বড়ুয়া। এখন এই তিনজনের পর প্রিয়া সাহা কী করে সেখানে গেলেন তা আমাদের বোধগম্য নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘সেখানে ৪০ দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও উপস্থিত ছিলেন। তিনি আমাদের দলনেতা। তার সঙ্গে না থেকে প্রিয়া সাহা কীভাবে ডোনাল্ড ট্রাম্প যে ২৭ জনের সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলেছেন, সেখানে ঢুকলেন এটিই বড় প্রশ্ন আমাদের কাছে।’
প্রসঙ্গত, গত বুধবার হোয়াইট হাউসে ১৬ দেশের ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার ২৭ ব্যক্তির সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহাও সে বৈঠকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পান। সেখানে প্রিয়া সাহা মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বলেন, ‘আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। বাংলাদেশে তিন কোটি ৭০ লাখ হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান নিখোঁজ রয়েছেন। দয়া করে আমাদের লোকজনকে সহায়তা করুন। আমরা আমাদের দেশে থাকতে চাই।’
এরপর তিনি বলেন, ‘এখন সেখানে এক কোটি ৮০ লাখ সংখ্যালঘু রয়েছে। আমরা আমাদের বাড়িঘর খুইয়েছি। তারা আমাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে, তারা আমাদের ভূমি দখল করে নিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো বিচার পাইনি।’
ভিডিওতে দেখা গেছে, একপর্যায়ে ট্রাম্প নিজেই সহানুভূতির সঙ্গে এই নারীর সঙ্গে হাত মেলান। এ সময় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ওই নারীকে প্রশ্ন করেন, ‘কারা জমি দখল করেছে, কারা বাড়িঘর দখল করেছে?’ ট্রাম্পের প্রশ্নের উত্তরে ওই নারী বলেন, ‘তারা মুসলিম মৌলবাদী গ্রুপ এবং তারা সবসময় রাজনৈতিক আশ্রয় পায়। সবসময়ই পায়।’

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: