Tuesday, July 30, 2019

বিনা চিকিৎসায় ও অবহেলায় মৃত্যু পথযাত্রী মুক্তিযোদ্ধা সাধন কুমার

RAJBARI PIC

খন্দকার রবিউল ইসলাম, রাজবাড়ী প্রতিনিধি: স্বাধীনতা যুদ্ধে জয়ী হলেও জীবনযুদ্ধে পরাজিত সৈনিক মুক্তিযোদ্ধা সাধন কুমার চক্রবতী। অযত্ন অবহেলা আর বিনা চিকিৎসায় ছোট ঝুপড়ি ঘরে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন তিনি।

১৯৭১ সালে দেশকে পাকবাহিনীর কবল থেকে মুক্ত করতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে ভারতের মুক্তিযুদ্ধের কল্যাণী ট্রেনিং ক্যাম্পে ট্রেনিং শেষ করে দেশে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে পাক শত্রুপক্ষ কে পরাজিত করেন।

আর আজ এই মহান মুক্তিযোদ্ধার স্থান হয়েছে রাজবাড়ীর সদর উপজেলার খানগঞ্জ ইউনিয়নের বেলগাছি পুরাতন বাজার ২শত বছরের অধিক পুরাতন মন্দির আকিনার পিছনে একটি ঝুপরি ছাপরা ঘরে। যার মধ্যেই তার জীবন সিমাবদ্ধ। নেই সে ঘরে কোন আলো বাতাস ঢোকার ব্যবস্থা। নেই থাকার জন্য কোন ভালো বিছানা। উপরে টিন আর নিচে মাটি। এই মাটিই তার বিছানা। ঝড়বৃষ্টি হলেই কাদাঁ হয়ে যায় তার এই মাটির বিছানা। তার শরীর শুকিয়ে জীর্ণশীর্ণ। ভাঙ্গা চুরা ঝুপরি ঘরের মেজতেই এভাবেই বেচেঁ আছে মুত্যু পথযাত্রী দেশের সুর্যসন্তান।

যিনি ভূমিকা রেখেছেন দেশ স্বাধীন করার জন্য মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে। তিনি আমাদের দিয়েছেন একটি স্বাধীন দেশ। আর সেই বীর সন্তানকে আমরা দিয়েছি একটি ঝুপরি ঘর, যেখানে কোন আলো বাতাস পর্যন্ত ঢুকতে পারে না। মরনেই সব কিছু শেষ হয়ে যায় কবর আর চিতাতেই শেষ আশ্রহয়। হয়তো এক দিন এই মানুষটি মৃত্যুবরণ করে পরে থাকবে কেউ জানতেও পারবে না। হয়তো মৃত্যুর কয়েকদির পরে লাশ পচাঁ দূরগন্ধ বের হলে জানতে পারবে তার মৃত্যুর খবর। এখন মৃত্যুই যেন তার জীবনের সকল সমস্যার সমাধান।

তবে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার নেই কোন সনদ। স্থানীয় এলাকাবাসী সুত্রে জানা গেছে সুস্থ থাকা অবস্থায় রাজবাড়ীর মুক্তিযোদ্ধা কমন্ডার থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় পর্যন্ত গিয়ে শত চেষ্টা করেও মুক্তিযোদ্ধার সনদ সংগ্রহ করতে পারেননি।

স্থানীয় একাধীক এলাকাবাসী সবাই এ প্রতিবেদককে বলেন, এই সাধন কুমারই দেশের একমাত্র হতভাগ্য মুক্তিযোদ্ধা। না খেয়ে বিনা চিকিৎসায় যেন মুক্তিযোদ্ধা সাধন কুমার মৃত্যু না হয়-এ দাবি স্থানীয়দের। তার সুচিকিৎসা ও পুণ্যবাসন করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

অবহেলায় পরে থাকা শ্রী সাধন কুমার গৌস্বামী চক্রবতী রতনদিয়া ইউনিয়নের মহেন্দ্রপুর গ্রামে তার মামা ভৈরব কুমার লাহরির বাড়িতে বড় হয়েছেন।

স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে সাধন কুমার ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা তিনি ভারতের মুক্তিযুদ্ধের কল্যাণী ট্রেনিং ক্যাম্পে ট্রেনিং নিয়েছিলেন। সাধন নিজেও মুক্তিযোদ্ধে অংশ গ্রহণের বহু স্মৃতির কথা বলেছেন। অর্থাৎ কাগজ পত্র (সনদ) থাক বা না থাক তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭৬ সালে তিনি স্নাতক ডেগ্রী অর্জন করেন। তিনি চির কুমার। মামার পরিবার অন্যত্র চলে যাওয়ায়, আশ্রয়হীন হয়ে পরেন তিনি। তার ব্যক্তিগত কোনো জমি জমা বা আশ্রয় ছিলো না। যার কারণে তিনি ৩০/৩৫ বছর শিক্ষার ফেরিওয়ালা হয়ে বিভিন্ন মুসলিম পরিবারে লজিং মাষ্টার হিসেবে থাকতেন। নির্লোভ ধর্ম নিরপেক্ষ এই লোকটি ছিলেন অহিংস। ঘর বাধা বা স্থায়ী ঠিকানা করতে চাননি কখনও। সর্বধর্মে লোকেরাই তাকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করতো। বছর তিনেক আগে তিনি, হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পরেন। তিনি থাকতেন রঞ্জু চৌধুরীর কাচারি ঘরে। চরম অবহেলা, অযতেœ, খাদ্য সঙ্কটে ভুগছিলেন তিনি।

বেলগাছি আরশিনগরের প্রতিষ্ঠাতা আশরাফুল আলম আক্কাস বলেন, এই বীর মুক্তিযোদ্ধার বিষয়ে আশ্রয় ও পূর্ণবাসনের জন্য প্রতিবাদ তার এই প্রতিবাদের কারনে টনক নরে সনাতন ধর্মঅবলবনকারী হিন্দু সম্পদায় বাবুদের। সাধন চক্রবতী গৌস্বামী উচ্চ বর্নের হিন্দু হওয়ায় তাকে স্থান দেওয়া হয় শ্রী, শ্রী গৌরাঙ্গ মহা প্রভুর মন্দিরের আশ্রমে। ডাঃ দিপ্তি রানী সাহা ও জেসি সাহা সহ স্থানীয় গন্যমান্য হিন্দুদের তত্ত্বাবধানে তাকে দেখভাল ও সেবা সুস্থতা করার কথা ছিল। কিন্তু আজ শুনছি তার কোন খোজঁই রাখেন না কেউ ভাবতে অবাগ লাগে।

ডাঃ অপূর্ব কান্তি সাহা বলেন, সাধন একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, কিন্ত কোন দিনই তিনি নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরিচয় দিতে চাননি। ঘরসংসারও তিনি করেননি। তিনি জীবন সংসার কি জিনিস কখনো বুঝতেই চাইতেন না। সাধনের কোন লোভ লালোসা ছিলনা। সাধন সেনাবাহীনিতেও চাকরী করতেন। কয়েক বছর পরে চাকরী ছেড়ে দিয়ে চলে আসে। পরে আবার বিদ্যুৎ অফিসেও চাকরী করেছে। সেটাও ছেড়ে দিয়েছে। সত্যি বলতে কি তার জীবনের প্রতি কোন মায়া ছিল না। তিনি তার ইচ্ছে মত চলতেন। ৩/৪বছর আগে বেলগাছি রেল স্টেশনে পরে থাকতো। পরে আমরা কয়েকজন মিলে তাকে তাকে মন্দিরে রাখার ব্যবস্থা করে দেয়। পরে গত বছর তিনি আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পরে। বিছানাতেই প্রসাব পায়খা করে দেয়। পরিস্কার করার মত কাউকে পাওয়া যায় না। তার পর মন্দির সেখানে তো পরিষ্কার রাখতে হবে। মন্দিরের পবিত্রতা বিষয়ে বিবেচনা করে সকলরের সাথে আলোচনা করে। তাকে মন্দিরের পিছনে একটি ছাপড়া ঘর করে দেওয়া হয়। বর্তমানে তিনি সেখানেই আছেন। তবে এখন যে তিনি এতটা অযতেœ আছে আমার জানা নেই। তবে আপনি বলেছেন আমি খোজঁ নিয়ে দেখব।



বীর মুক্তিযুদ্ধা মেজর অলিক গুপ্ত (বীর প্রতিক) বলেছেন, সাধন কুমার একজন মুক্তিযোদ্ধা ওর কাছে কটি সনদও আছে। ১৯৭২ সালে ফেব্রয়ারী অথবা মার্চ মাসে দেওয়া হয়েছিল। আমি তখন ফরিদপুর জেলার মিনিশিয়া সব গুলো ক্যাম্পের ইনচার্চ ছিলাম। কিন্তু আমি যে গুলোতে সাইন করেছি সেটা হলো ফরিদপুর সদর উপজেলার মিনিশিয়া ক্যাপম ছিল সেটা থেকে। মুক্তি বার্তা বা লালবাগ বই এসব জায়গাতে গেজেট টেজেট করাই নাই। কারন ও নেফ টেপ করতো তো। মুক্তিযুদ্ধ করলাম ভাতা নিব এমন একটি ফিলিংস ছিল না ওর মধ্যে। ৯০ এর দশকে যখন ৯৬ পরে অধ্যক্ষ আজিজুল হক সাহেব লাল মুক্তিবার্তা করেন। তখন ওর কাছে ফরম নিয়ে গিয়েছিল বেলগাছি হাই স্কুলের শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ। যাই হোক সর্বশেষ গত ২০১৬/১৭ সালে ফরম দিল, অনলাইনে রেজিষ্টেশন এগুলো করছে। আমিও ওকে একটি সার্টিফিকেট দিয়ে ছিলাম যে সে মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু যে দিন কালুখালিতে যাচাইবাছাই হয়। ওখানে সেদিন যারা ছিল ওর সাথের যারা মুক্তিযোদ্ধা ছিল তার ঢাকায় থাকার কারনে তাকে কেউ চিনতে পারেননি। হয়তো সেখান থেকে ওর নাম বাদ পরেছে। তবে সাধন যে একজন মুক্তিযোদ্ধা সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। যখন যাচাইবাছাই হয় ১৭ সালের ফেব্রয়ারী মাসে। তখন আমি ২ আসনের এমপি জিল্লুল হাকিম এর সাথেও কথা বলেছিলাম। তিনি বলেছিলেন দাদা আমিও সাধনকে চিনি। আপনি আমার সাথে সাধনকে দেখা করতে বলেন। আমি সাধন কে পরে এমপির সাথে দেখা করতে বলি। কিন্তু এমপি ঢাকায় থাকার থাকার কারনে তার সাথে দেখা করতে পারে নি। যাচাইবাছাই এর বোর্ডে নির্বাহী অফিসার, রাজবাড়ী জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমন্ডার ছিলেন। তাদের কেউ আমি বলেছিলাম। কিন্তু তারাও সাধন কে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেননি। এটা অতান্ত দুঃখজন বিষয়।

NEWS .....http://www.somoyerkonthosor.com

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: